জুলাই ২৬, ২০২১
আশাশুনি ও শ্যামনগরে সাড়ে চার লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ কর্মসূচী গ্রহণ
আশাশুনি প্রতিনিধি: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপক‚লীয় অঞ্চলের জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরিদ্র। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ ভ‚মিহীন এবং তারা কৃষিকাজ, মাছ শিকার, চিংড়ি চাষ ও দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়াও সুন্দরবন সংলগ্ন লোকজন সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহ করে থাকে। এ ধরনের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ জলবায়ু ও আপদ দ্বারা আক্রান্ত। ১৯৯১ সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালে আইলার মত ঘূর্ণিঝড় উপক‚লীয় এলাকায় আঘাত হানে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ লোক প্রাণ হারায় ও বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষাতগ্রস্ত হয়। উপক‚লীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য বনায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট আপদ ও দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস এর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ ২০১৮ সাল থেকে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ১৫০ হেক্টর চর বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ৫০ হেক্টর চর জমিতে ১,৫০,০০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করেছে এবং আরো ১০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নে মাদার ও মরাগাং নদীর তীরবর্তী ২২ হেক্টর চরে এবং আশাশুনি উপজেলার প্রাতাপনগর ও আনুলিয়া ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী চরে ২৮ হেক্টর জমিতে বনায়নের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ ৪টি নার্সারীতে চারা উৎপাদন করে বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে উক্ত নার্সারীতে ১,১০,০০০ টি চারা মজুদ আছে, যা পরবর্তীতে বনায়ন কর্মসূচীতে ব্যবহার করা হবে। ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে নতুনভাবে জীববৈচিত্র সৃষ্টি হচ্ছে যা পরিবেশের জন্য উপকারী। ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে স্থানীয় জনগণ মাছ, কাঁকড়া সংগ্রহ, মধু আহরণ করাতে পারবে, ফলে সুন্দরবনের উপর চাপ কমবে। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে উপজেলা বন কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে নার্সারীতে চারা উৎপাদন, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসারের মাধ্যমে বসত ভিটায় সবজি চাষ, জৈবসার প্রস্তুত, হাঁসমুরগী পালনের উপর সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় জনগণের বিকল্প জীবিকায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং কমিউনিটির সদস্য মোছাঃ রেশমা বেগম বলেন, “সুন্দরবন আমাদের মা”। সুন্দরবন আমাদের ঝড়, জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষা করে। এখান থেকে আমরা কেওড়া, জ্বালানী কাঠ ও গোলপাতা পাই, যা আমাদের অনেক উপকারে লাগে। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সনাতনকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মজিবর সানা বলেন, আপনারা যে গাছ লাগিয়েছেন তা আমাদের অনেক উপকার করছে। দুটি ঝড়ে আমরা রাস্তায় ছিলাম। এই বনায়নের কারণে রাস্তাগুলো ভাল আছে। যেসব জায়গায় গাছ নেই সেখানে বেঁড়ি বাঁধ ভেঙ্গে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, ফসলী জমি, মাছের ঘের, বেঁড়িবাঁধ ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বেশি করে গাছ লাগানো উচিত বলে তিনি মনে করেন। 8,636,911 total views, 1,910 views today |
|
|
|